গোপনবাসীর কান্নাহাসি ২ : কনভারসেশন - Rik Amrit

গোপনবাসীর কান্নাহাসি ২ : কনভারসেশন

Listen to this article

Enjoy hands-free reading with our audio player

3 min listen Multiple voices available
Ready to play
Audio Controls
Ready to play

কোনো একটা খবরে যেভাবে রিয়্যাক্ট করি, জীবনের সেরকম কোনো ঘটনার কাছে মাথা নত করি কি সেইভাবে! এই যেমন ধরুন, ‘ডিপ্রেশন কিলস’ হ্যাশট্যাগে লকডাউনের শুরুটা মেতে রইলাম সুশান্তের মৃত্যুতে, কিন্তু সবচেয়ে কাছের মানুষেরই ডিপ্রেশন আছে, তার পাশে রইলাম কি! এমন সব হাবিজাবি নিয়ে আজকাল ভাবি! আগেও ভাবতাম, যখন লকডাউনের অবসরে অনেক পরিকল্পনা ছিল; এখন সেই সমস্ত ব্যর্থ পরিকল্পনার কাছে সার্থক আত্মসমর্পণ করে ভাবি। আত্মবিশ্লেষণও করি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে। মাপজোক করে দেখি, শরীর কতটা রোগা হল, মাথা কতটা মোটা!

আজ ভাবতে বসলাম কী কী হারালাম শেষ কয়েকমাসে। একটা সানগ্লাস, একটা ছাতা, কয়েকটা বই, একটা ল্যাপটপ, বেশ কিছু টাকা, বিছানার চাদর, বালিশ, স্বপ্ন, বন্ধুত্ব আছে কিছু মানুষের সঙ্গে এমন ধারণা, আর অনেকগুলো দিন। কখনও কখনও সেল্ফটিকেও হারিয়েছি তাও হয়েছে। কথা হারিয়েছি, লেখা হারিয়েছি, হারিয়েছি ভাষা। চড়ুই পাখির সঙ্গে সখ্যতা হারিয়েছি সেই কবে, এখন হারালাম সেই স্মৃতিটাও। আবিউসার, অপরচুনিস্ট এরকম অনেক জার্গনের জঙ্গলে হারিয়ে ফেলেছি নিজের আসল পরিচয়। অভিযোগ করার একটি আস্ত বছর ‘২০২০’ হারিয়েছি।

এইবার এই একপাক্ষিক চিন্তা বড্ড হার্মফুল, কাউন্সিলর মারবে। উল্টোটাও ভাবা দরকার সেইমতো। কী কী পেলাম! অনেকটা অবসর, ফাঁকা স্পেস, এতটাই যে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেয়ে গুলিয়ে ফেললাম বেশি। পেলাম অস্থিরতা, চিড়বিড়ানি, সাফোকেশন। আর অনেকগুলো অপরাধ করার অন্যায় জেদ। নিজের সাথে নিজেরই ইন্সটিঙ্কটের একটা বোঝাপড়া। আর অনেক মানুষের সঙ্গে অনেকখানি ভুল বোঝাবুঝি। আর

অনেক ভুল বোঝাবুঝি পেরিয়ে, আজ ধরতে পারি, আমরা প্রত্যেকেই চাই অপরজন আমাদের মতন করে বুঝে নিক আমাদের। অথচ প্রত্যেকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন পারসেপশনে বাঁধা পড়ে আছি। এক্সপ্রেশন হয়ে উঠেছে মোদ্দা কথা। আমি যেমন খুশি তেমন এক্সপ্রেস করব তুমি বুঝে নাও। এই যেমন আমি। পাকামো মেরে কাউন্সেলিং লাগবে না ভেবে, ১২০০/- টাকা বাঁচাতে গিয়ে ১২০০০/- টাকা নষ্ট করে ফেলি, অনুভবগুলো তো বাদ। আমার সবচেয়ে কাছের, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, তাকে এমন আঘাত করে ফেলি, যেখান থেকে ফেরা মুশকিলের হয়ে যায়। কেন? কারণ আমি চাইছি, তুমি আমাকে আমার মতন করে বোঝো, আর তুমি বুঝছ না! হয়ে গেল এক্সপেক্টেশনের বাবা-ভাই-বয়ফ্রেণ্ডসুলভ চুলোচুলি। আচ্ছা বড্ড বোরিং হয়ে যাচ্ছে মনে হয় লেখাটা, অনেকগুলো শব্দ বেকার বেকার। জ্ঞান দেওয়া আমার স্বভাবে আছে বটে, কিন্তু ব্লগের নাম যেহেতু অন্তরগ্লানি সংসারভার, আমি সেই ভারখানিই একটু চিনে নেওয়ার চেষ্টা করছি বরং। আসলে যে জায়গায় মূলত আমি পৌঁছেছি এতকিছু নষ্ট করে, তাতে এটাই মনে হয়েছে যে, কমিউনিকেশন বলতে যা বোঝায়, তা আদতে ঘটছে না। কথা কেবল একটি প্রান্তেই আটকে থাকছে, যেন এয়ারপোর্টে আড়াই নম্বর গেটের কাছের জ্যাম। যাদবপুর পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধের খবর বাসি হয়ে যায়। যাকে বিকেলে সরি বলার ছিল, তিনি এই মধ্যান্তরে ডবল গোঁসা করে বসে আছেন। এভাবেই জীবনের অপ্রত্যাশিত দেরীগুলো হয়। তখন সাইকোলজিস্টের কাছে আমরা মেরামতির জন্য যাই বটে, কিন্তু যা গেছে, তা কিন্তু চিরকালের জন্যই গেছে।

আমরা যারা সত্যি অর্থেই মারিয়ে ফেললাম নিজেই নিজের গু, তাদের কথা বাদ দিন, যাদের এখনও মারানো বাকি আছে, তারা সামলে যান, এইটুকু অনুরোধ। আমার কপাল ভালো, এতকিছুর পরেও একজন ভালোবাসার মানুষ আছেন, যিনি আমার সমস্ত অন্যায়, অপরাধ বুকে জড়িয়ে ধরে সহ্য করেন। সবার ভাগ্যে এই ভালোবাসা তো থাকে না। একটি প্রচণ্ড ডিপ্রেশন থেকে ওঠার সাহস দেয় আমাকে আমার সেই ভালোবাসার মানুষ। আপনি ততটা প্রিভিলেজড নাও হতে পারেন। আর এই অসুস্থতা স্বীকার করে নিলে, ছোট হয়ে যাই না আমরা, বরং প্রতিনিয়ত আত্মসমীক্ষণ, পরামর্শ, এবং ওষুধ একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। আমার ছোটবেলাতেও ডিপ্রেশন ও ভুলবোঝাবুঝি বড্ড লাক্সারিয়াস দুটো শব্দ ছিল। এখন তা ব্যুফের সিরিয়ালে মেনকোর্সের আইটেম। আসলে “সকল ফুলের কাছে এত মোহময় মনে যাবার পরেও
মানুষেরা কিন্তু মাংস রন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে”। আমি আমার মতন করে ভালো থাকার ‘অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ’ একখান খুঁজে পেয়েছি। মনে রাখবেন খোঁজ চিরন্তন একটা প্রসেস, কিন্তু প্রসেসের লোভে প্রাপ্ত পরশপাথর হারাবেন না।

সন্দেহ নয়! বিশ্বাস করুন!


Comments (0)

Rate this Article

0.0 (0 ratings)
How do you feel about this article?
Comments (0)
💬

No comments yet

Be the first to share your thoughts!

Join the Discussion
0/1000 characters
Page-Specific Footer Example