গোপনবাসীর কান্নাহাসি ৬ : বই - Rik Amrit

গোপনবাসীর কান্নাহাসি ৬ : বই

Listen to this article

Enjoy hands-free reading with our audio player

3 min listen Multiple voices available
Ready to play
Audio Controls
Ready to play

মেলার শেষ ঘণ্টাটি পড়ে গেছে। যেভাবে শো-এর পর বাড়ি ফেরার উদ্দেশে শিল্পী হোটেল রুমে একা গোছাতে থাকেন নিজের স্যুটকেশ, দোকানের ভিতর সাজানো বইগুলির শরীরেও ঠিক সেই ক্লান্তি। ট্যুর ম্যানেজারকে বারবার বলেও চেঞ্জ করা যায়নি হোটেল ঘর, ট্রেনের সিট; নইলে জার্নি ও পার্ফরমেন্স দুইই ভালো হত, যেন সেই অভিমানেই তাঁর দিকে একটু ছলছল আড়চোখে আমাদের নবীন বইগুলি তাকালেও  প্রকাশক তা বুঝলেন না। তিনি হাঁটা দিলেন। কত মুহূর্ত, বিক্রির হিসাব, কয়েকঢোক জল, ও রয়্যালটি পেড়িয়ে তাকে আবার পাওয়া যাবে তা আজ তিনিও জানেন না।

বইয়ের কোনও শাহরুখ খান নেই। নইলে বইদের জন্য বানানো ওম শান্তি ওম দেখে তারাও জানতে পারত যে, ভালো পাঠকের কাছে বই শেষমেশ পৌঁছে যায়ই। আর যদি না যায়, তাহলে জানতে হবে, এডিশন এখনও বাকি আছে মেরে দোস্ত। ফলে তারা নিজেরাই বেছে নিতে চায় নিজেদের পাঠক, যেভাবে আত্মা বেছে নেন নিজের জন্য গর্ভ। পাঠক তাঁদের পড়েন, কিন্তু বই তো কিছু পড়ে না। তাঁর তো কোনও ইশকুলও নেই। নেই কোনও আদর্শ বই হয়ে ওঠার ট্রেনিং। কোনও কোনও বাঘেরও তো একটা সার্কাস জুটে যায়, বইয়ের কপালে তা নেই। বইদের জন্য নেই কোনও ভগবদগীতা। ফলে ধৈর্য, স্থিতি, এসব তারা জানে না। এমবিএ ডিগ্রীর অভাবে তারা বোঝে না বাজার। ফলে, অস্থির আত্মার মতন, বইদেরও আধার বেছে নিতে ভুল হয়ে যায়। বিপরীত সংস্কারে ভুগে তাকে ধুলো খেতে থাকে। মর্গের মতনই কোনও এক অচেতন লাইব্রেরী একসময় গিলে খায়।

গত দশকে কোনও এক কলেজ দিনে, এরকমই এক লাইব্রেরীতে ঢুকে আমার অহং ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সেই লাইব্রেরীতে ঝুল ছিল না। এলইডির আলোয় স্পষ্ট পড়া যায় বইয়ের স্পাইন। পরে কখনও গুনে দেখেছিলাম মোটামুটি এক হাজার বইয়ের এক বিস্তৃত পরিবার তাঁর। মালিক বই কেনেন, কিন্তু পড়েন না। আর আমি, ওই হাজার বইয়ের মধ্যে কেবল একটি বইকে চিনতে পেরে বহুদিন নিজেকে সেই বইটিরই অধ্যাপক ভেবে সান্ত্বনা দিয়েছি। কাশী ও কালীঘাট এক নয়, এমন ভাবে তখনও বুঝতে শিখিনি প্রকৃত লাইব্রেরীর সংজ্ঞা। একটি বইয়েরও বোধ হয় একথা বুঝতে সময় লাগে। স্কন্দপুরাণের মতন সেও তখন নিজের মূল্য খুঁজে পায় হাজার বছর পর। আর কপালে যদি কখনও এক ভালো পাঠক জুটে যান? তখন তাকে আর দেখে কে! ট্যান্ট্রাম শব্দটার মানে যদি জানা থাকে, বা কোনোদিন যদি টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় তাহলে আর বোঝানোর দরকার পড়ে না। যেভাবে গ্রাম্যভূত আপনার পথ, আপনার বুদ্ধিকে ভুলিয়ে ছাড়ে, ঠিক তেমন ভাবেই সারাটা দিন মাথার ভিতর চলতে থাকে তাঁর সংকীর্তণ। পকেটের পয়সা খসে কিছু অন্যকে উপহার দিতে। ঘটক হিসেবেও সে তো কম ঋত্বিক না। কিন্তু ভাঙামেলার তাকে অনভিজ্ঞ যে বই তাঁর তো সবে কৈশোর। এখন তাঁর স্বপ্ন বেশি, আবেগ বেশি, অ্যাটাচমেন্টও বেশি, দাম। সে তো এখনও মলাটকেই তার শরীর বলে জানে। পাতা ওলটানোকেই জন্মদিন বলে উদযাপন করতে চায় রোজ।  

Comments (0)

Rate this Article

0.0 (0 ratings)
How do you feel about this article?
Comments (0)
💬

No comments yet

Be the first to share your thoughts!

Join the Discussion
0/1000 characters
Page-Specific Footer Example