আমার আজকাল বেশ মনে হয়, আমি মানুষটা বেশ সুখী। কিছুটা লাকিও বটে। লকডাউন পেলাম। ব্রহ্মা কীভাবে আশি বছরে একদিন যাপন করেন তার আভাসও পেলাম। মাঝে মধ্যে সার্ত্রেকে স্মরণ করে বোঝাতে চাইলাম নিজেকে, যখন আমরা একা থাকি, তখন যদি একাকীত্ব পেয়ে বসে, তাহলে জানতে হবে আমরা খুব খারাপ সংসর্গে আছি। কিন্তু তাও হলো না। রজঃ গুণে ভরা রজঃস্বলা নাভি। হজম হয়!! কিন্তু আমি লকডাউনের কোনো কথা বলব না, বলব না তার কারণ আমাকে-আমাদের এর সঙ্গেই মানিয়ে চলতে হবে। আজ এবং আগামীদিন। ঠিক যখনই এই আজ ও আগামীদিনের কথা মাথায় আসে, তখন এটাও ভাবার চেষ্টা করি, অতীতে কি ছিল এমন কিছু। খুব কম বা কমন ইতিহাস তো পড়া হলো না। তাহলে? আসলে যে লোনলিনেস আমরা বেছে নিই স্বেচ্ছায়, সেখানে আমরা উন্নাসিক, যা চাপিয়ে দেওয়া, সেখানেই আমাদের ইনসিকিওরিটির যাবতীয় দাঁত নখ চামড়া ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে। নিজের কাছে নিজেকেই অসহ্য লাগে তখন।
তবু আমাদের জীবনানন্দ আছেন, রবীন্দ্রনাথ আছেন। আমরা সিনেমা বানাতে ও দেখতে শিখে গেছি। বানিয়ে ফেলেছি একথা বলবো না, কিন্তু শিল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ আমাদের মনের মধ্যে নেই। এই লকডাউনেও, ঘোর লকডাউনেও যখন সুন্দরবন উড়ে গ্যাছে হাওয়ায়, যখন শ্রমিকদের গায়ে নতুন বিশেষণ জুড়েছে পরিযায়ী(আগেও ছিল, শুধু ট্রেণ্ডিং ছিল না এই যা), নুসরত যখন টিকটক করছিলেন, তখন তাঁরই এলাকায়, কয়েকজন মানুষ খাবার চেয়ে, বেঁচে থাকতে চেয়ে কান্নাকাটি করছিল, আর কয়েকজন বুড়ো ভাম এসির মধ্যে বসে, মুখে মাস্কের ছদ্ম আড়ালে কালচার দাদু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন আড়ালে সিল্ক রেশমার চরিত্রে মুচকি হাসছিলেন বিদ্যা বালান, পিকচার সির্ফ তিন চিজো কি ওয়াজে সে চলতি হ্যায়। তখনও আমরা সমস্ত অভিযোগে কেবল মুক্তিই চেয়েছি। এন্টারটেইনমেন্টেই তো মুক্তি আমাদের। আর এই সমস্ত এন্টারটেইনমেন্ট এর ‘অনুপ্রেরণা’ তিনি।
কিন্তু আমি লকডাউনের কথা বলবো না। বলতে গেলে আঙুল থেকে পচা গ্যাস বেড়িয়ে আসে। সেই গ্যাস জমাট বাঁধে রক্তে, শব্দ হয়ে বেরোয়। গলা ভাঙে। গলা ভেঙে গেলে অভিনয়ে অসুবিধে হয়। একজন শিল্পীর উচিত, নিজেকে মেইনটেইন করা…