ভারতীয় রসবাদ ও বর্তমান বঙ্গরঙ্গচর্চা (পর্ব ২) - Rik Amrit

ভারতীয় রসবাদ ও বর্তমান বঙ্গরঙ্গচর্চা (পর্ব ২)

Listen to this article

Enjoy hands-free reading with our audio player

3 min listen Multiple voices available
Ready to play
Audio Controls
Ready to play

বাংলাভাষার তথা বাংলা কাব্যের (বা সাহিত্যের) ইতিহাসকে চর্যাপদের সময়কাল থেকে গণনা করা হলেও, নাট্যচর্চার ইতিহাসকে অষ্টাদশ খ্রিষ্টাব্দের আগে স্বীকৃতি দিতে কলোনিয়াল কালচারমনস্ক তথাকথিত শিল্পীদের কিছুটা অনীহা তো আছে। কারণ তাঁরা তাঁদের শিল্পচর্চাকে অষ্টাদশ শতাব্দীর বঙ্গীয় নবজাগরণের উত্তরাধিকার হিসেবেই দেখেন। ইতিহাস বলতে বোঝেন কেবল প্রত্ন বা যা কিছু ম্যাক্সমুলার রচিত। এখন এই কাব্যের ইতিহাস ও নাট্যের ইতিহাসের যে ভেদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আমরা দেখি, তা যে কতখানি হাস্যকর, তা বুঝে নিতেও, যতটুকু মেধার প্রয়োজন হয়, বলতে দুঃখ হয় না, ততখানি মেধা তাঁদের ও তাঁদের উত্তরসূরিদের মধ্যে দেখতে পাই না। তদুপরি তাঁদের শিল্পচর্চার পরিণাম হিসেবে দেখি অদ্ভুত এক অহং, ম্যানিপুলেশন, এবং সরকারি টাকার শ্রাদ্ধ ও হবিষ্যি রান্না।   

মোটামুটি সারা দেশেই অবশ্য চিত্রটি কম বেশি এক। যেমন ইন্ডিয়ান মেথড ইন অ্যাক্টিং নামক একটি বইয়ের নাম প্রসন্ন’স মেথড ইন অ্যাক্টিং হলে কোনও ক্ষতি হত না, তেমনই মহর্ষি চট্টোপাধ্যায় বিরচিত ভরতের নাট্যশাস্ত্র একটি সহজপাঠ নামক একটি বইকে বিখ্যাত হইবার সহজপাঠ নামকরণ করলেও কোনও ক্ষতি হত না! এছাড়া মেডিজি ও সিনোপসিস পাঠে শিক্ষিত নানান মিত্র, চক্রবর্তী প্রমুখের নাদতত্ত্বের উপর, নাট্যধর্মীতার উপর ব্যুৎপত্তিহীন ওয়ার্কশপ তো আছেই! তাঁদের কেরিয়ারের জন্য এইসবের প্রয়োজন আছে তাঁরা করুন, কিন্তু অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে হনু-হুব্বা বানানো, একে আমার ব্যক্তিগতভাবে বেশ খানিকটা নির্লজ্জতা ও ক্রিমিনাল মানসিকতা বলেই মনে হয়! এতে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েদের, আরও হচ্ছে, হবে! যারা অংশগ্রহণ করছেন তাঁদের সাবধান ও সচেতন হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনও উপায় আছে বলে আমার জানা নেই। আমি জানি প্রকৃত শিল্পী, প্রকৃত অধিকারী এইসব শ্যাওলায় পিছলে যাবেন না। তবে হঠাৎ করে এই দুশোবছরের কুৎসার ইতিহাসকে উপেক্ষা করে ভারতীয় শিল্পের যে দর্শন আবার তার কাছাকাছি পৌঁছে যাব এই বাংলায় এ স্বপ্ন আমি দেখি না! তবে যাবতীয় বিস্মৃতি ভুলে কিছু মানুষ আছেন যারা নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছেন! আনন্দের কথা এত লড়াই-এর পরেও ভারতীয় শিল্প-অধ্যাত্ম-দর্শনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন ধারাটিকে চিহ্নিত করা গেছে।

নাট্যের ক্ষেত্রেও সেই সূত্র একেবারেই আলগা হয়ে যায় নি। ভারতীয় শিল্প কেবল প্রতিভার কথা স্বীকার করে না; প্রতিভার সঙ্গে সঙ্গে পাণ্ডিত্য ও অধ্যবসায়েরও প্রয়োজন হয়! তাই ভারতীয় যেকোনো চর্চার জন্য সবার আগে হয়ে উঠতে হয় অধিকারী! অধিকার অর্জনের পর তবে বিষয়ের অন্দরে প্রবেশের অনুমতি মেলে! পিয়ালদাকে দেখি পাণ্ডিত্য, প্রতিভা, ও অধ্যবসায় দিয়ে কীভাবে বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে আনছেন একের পর এক প্রমাণ, সাক্ষ্য! এভিডেন্স ও ইনফেরেন্সর সংরচনায় তিনি নির্মাণ করছেন এক নতুন দেশকাল! ভারতবর্ষ শূন্য, ক্যালকুলাস, যোগ, বাণিজ্য ছাড়াও আরও একটি যে অমূল্য উপহার দিয়েছে বিশ্বকে তা হলো রস। একবিংশ শতাব্দীর ইন্টারনেট বিপ্লবীরা ভারতবর্ষে আইরনম্যানের অস্তিত্ব ছিল কি না, আজ থেকে লক্ষ বছর আগে বাহুবলি সত্যিই ওরকম লাফ দিয়ে হাইট এন্ড ডিস্টেন্সের অঙ্ক প্রমাণ করে দিতেন কি না ইত্যাদি প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে এই ইতিহাসকে আলগা না করে দিলে ভারতবাসীর কাছে নিজস্ব ঐতিহ্য সেলিব্রেট করার যথেষ্ট কারণ আছে বৈকি। নির্বিকল্প নিরাকার এই রসকে পার্ফরমিং আর্টসের ঐশ্বরিক শক্তি হিসেবেও অনেক সাধক উপাসনা করেন। আমি শুধু স্বপ্নে দেখি এক নগর; যেখানে রসের সাধকের জন্য অপেক্ষা করে আছে সমাজ। সে নগরের দ্বারপাল হিসেবে কাল স্বয়ং চিহ্নিত করছেন অধিকারী! চিদাকাশে পিয়ালদা আগামীর অধিকারীর জন্য মুছে দিচ্ছেন কয়েকশ বছরের এই বিস্মৃতিকে! যাবতীয় কুৎসার থেকে শিশিক্ষুকে বাঁচিয়ে আগামীর জন্য রচনা করছেন এক গুরুকূল, ভরতের পরিবার!  

Comments (0)

Rate this Article

0.0 (0 ratings)
How do you feel about this article?
Comments (0)
💬

No comments yet

Be the first to share your thoughts!

Join the Discussion
0/1000 characters
Page-Specific Footer Example