‘আঁধারের পার হতে এসেছি আলোতে’ : শ্রী পিয়াল ভট্টাচার্যের সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্তি ও আমার ব্যক্তিগত অনুভব

Share this

ভেবেছিলাম দিল্লী যাব, জগন্নাথ ডেকে নিয়ে গেলেন পুরী। অথচ আমার ভিতরের যে জগৎ, তাকে আলো করে আছেন যে মানুষটি, রাষ্ট্রের আজ তাকে বরণ করে নেওয়ার দিন। একটি পুরস্কার কি তবে এতটাই মাহাত্ম্য রাখে?

বাইরের কোনো স্বীকৃতিকেই আসল বলে আমরা কেউই যারা তাঁর ছাত্র চিনতে শিখিনি। বরং ভিতরের দিকে অভিমুখ করে অনুশীলন করাই তাঁর অঙ্গহার। তাঁর সমস্ত কাজেই তাই কোথাও বাইরের দিকে হাত-পা ছোঁড়া নেই। অস্তিত্বের সবকিছুই তো চিদাকাশে, বহিরাকাশে তা তো কেবলই মায়া। সুপ্রভাতে সমুদ্রজলে এসে পড়া আদিত্যের ছায়াটুকু। আদিত্য নিজে তো নয়। তাহলে তাকে নিয়েই মাতামাতি করছি কেন?

মাতামাতি করছি না! আনন্দ হচ্ছে, যে ভীড়ের বিরুদ্ধে, কয়েকলক্ষ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে একটি প্রাণ যা সবচেয়ে প্রাচীন, যা পরম্পরার, লড়াই করে তাকে স্বীকৃত করতে পেরেছেন। এবং কলকাতা থেকে অদূরবর্তী একটি গ্রামে বসে, যেখানে কয়েকবছর আগে পর্যন্ত সন্ধের পর অটো পাওয়া যেত না! অথচ গ্রাম্য মানসিকতায় লোকপাল প্রতীষ্ঠার জন্যেই তো তাঁর নাট্য। নাট্য সৃজনের আদি কারণ। পশ্চিমবঙ্গের নাট্য ইতিহাসের শেষ ২২৫ বছরে যে চর্চার আবির্ভাব ঘটেনি। যে চর্চার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে! কয়েকটা প্রজন্মের মাথা মুড়িয়ে তাদের জীবন যৌবন শেষ করে ফেলা হয়েছে। সেই অবস্থায় তিনি লোকপাল প্রতীষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। সত্য শিল্পের চর্চার ও শিল্পের সত্যিকারের চর্চাই তো শিবের সাধনা। তাকে তিনি জীবনে এনেছেন। তাঁর ও ছাত্রদের মধ্যে। আমি উপনিষদ পড়েছি। পড়ে ফেলেছি বলব না। কিন্তু উপনিষদের আক্ষরিক অনুবাদটিতো তাঁরই আশ্রয় আমার কাছে। তাঁরই কাছে, নতজানু বসে জ্ঞানলাভ করা। এবং সেই ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় সার্বজনীন অনুভব। যা আমার, তা সবার। যা সবার তা আমার।

তিনি সামান্য হতে শিখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন কঠিনতম মুহূর্তে চুপ থাকা। বিশ্বাস রাখা, ভরসা রাখা। বিশেষ হলেই অহং আসে। এই উচ্ছ্বাস হে পাঠক, তাই কোনোভাবেই অহং-এর উচ্ছ্বাস নয়। এই আনন্দ, এই ইম্পিরিক্যাল জগতে শিল্পের অধ্যাত্ম প্রতীষ্ঠার। প্রকৃত শিল্প যে হারিয়ে যায় না, ভারতভাগ্যবিধাতা যে সত্য, তার প্রমাণ দিতে এমন ঘটনার প্রয়োজন তো হয়। প্রসিদ্ধিই গুরুর প্রমাণ, এমন কথাও তো অভিনবগুপ্ত বলেন।

আমার দিল্লী যাওয়া হলো না। আমি ইউটিউবে দেখব রাষ্ট্রপতি আজ সমস্ত জাতির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন। আমার শিক্ষক আজ প্রতিনিধিত্ব করবেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন নাট্যকলার। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে, স্বীকৃত হবে ইউনিভার্সাল কনশাসনেস। এর চেয়ে বড় ব্যঞ্জনা আর আছে কি!

শুভমস্তু

Share this
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Shopping Cart
Media
উপন্যাস (Novel)
গোপনবাসীর কান্নাহাসি (Whispers of Laughter and Tears)
কবিতা (Poems)
গল্প (Short Stories)
নিবন্ধ (Articles)
নাট্যশাস্ত্র (Natyashastra)
নন্দনতত্ত্ব (Aesthetics)
অন্যান্য (Other)
error: Content is protected !!
Scroll to Top
Enable Notifications OK No thanks
×