এডিট যার, ডকুমেন্টরি তার (পর্ব ১) - Rik Amrit

এডিট যার, ডকুমেন্টরি তার (পর্ব ১)

Listen to this article

Enjoy hands-free reading with our audio player

3 min listen Multiple voices available
Ready to play
Audio Controls
Ready to play
শো ভাঙার পর কয়েকঘন্টা কেটে গেছে। পরদিন সকালে নাটকের খুঁটিনাটি নিয়ে বিদ্বজনেরা ডিরেক্টরকে প্রশ্নে বিদ্ধ করলেও, আজ সাধারণ দর্শকের প্রতিক্রিয়া মোটামুটি ভালো হওয়ার কারণেই হোক, কিংবা প্রায় দু’মাসের সফর তার শেষ গন্তব্যের একদম কাছে এসে যাওয়ার ফলে, পুরো টিম রাত্তিরের ডিনার সেরে মনের আনন্দে সমস্ত প্রোপার্টি গুছিয়ে, ক্লান্ত শরীরে এই মধ্যরাত্তিরেও রওনা দেওয়ার জন্য তৈরি। পাঁচ জন সঙ্গীতবিৎ, দুজন গায়ক, তেরো জন অভিনেতা-অভিনেত্রী, ও আলো-শব্দ-মঞ্চসজ্জার জন্য ব্যাকস্টেজের তিনজনকে নিয়ে মোট পঁচিশ জনের গ্রুপ। কৌরব এই দলের সহকারী পরিচালক ও প্রোডাকশন কন্ট্রোলার। নাট্যকার হিসেবেও সে যথেষ্ট প্রতিভাবান বলেই পরিচালক শৌনক সরকার(রণিদা) মনে করেন। আগামীকাল ডিরেক্টরস মিটে তিনি ওকে, ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই, থাকতে বললেও, কৌরব জানে সকালে ডিরেক্টরস মিট অ্যাটেন্ড করে তারপর দেড়শ’ কিলোমিটার জার্নির পর ভেন্যুতে পৌঁছে সঠিক সময়ে শো শুরু করার পরিকল্পনাটা অবাস্তবোচিত, কারণ কন্ট্রোলার ছাড়া ব্যাকস্টেজের লোকজন অলস এবং ধীরগতির, তদুপরি স্টেজ সম্বন্ধে কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কৌরবেরই মুখাপেক্ষী; ফলে অভিনয় শুরু হতে দেরী হলে এই রণিদা, যিনি তাকে এত স্নেহ করেন, কৌরবকেই এর জন্য দায়ী করবেন ও সব্বার সামনে অপমান করবেন।

মোট দু’খানা ফোর্স ট্রাভেল মিনি বাস; প্রত্যেকটা বাসে ছাব্বিশ জনের সিট ক্যাপাসিটি; সকলের লাগেজ ও নাটকের প্রপস রাখতে অনেকটা যদিও তার জায়গাই চলে যায়।একটা বাস নাটকের প্রপার্টি ও সতেরো জনকে নিয়ে আগে রওনা হওয়ার পর, প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাগগুলো ও মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে পরের বাসটায় তাই রওনা দেওয়ার জন্য উঠে পড়েছে সে। সামনের দুটি কলামে পরপর পাঁচটি সিটে মিউজিশিয়ানরা, কৌরব বসেছে ওদের থেকে একটু আলাদাই। একদম শেষের আগে ড্রাইভারের রো-এর একুশ নং সিটে, জানলার ধারে। নাম ধরে ধরে অভিনেতা তথা এই পুরো ট্রিপের ম্যানেজার সিদ্ধার্থদা মাথা গুনে যাত্রী সংখ্যা, ও লাগেজে লিস্ট মিলিয়ে দেওয়ার পর ড্রাইভার স্টার্টারের চাবি ঘুরিয়েছে। কৌরব অনেকক্ষণ পর একটু একা, অন্ধকারে। জানলা বন্ধ হলেও চোরাপথ দিয়ে অল্প অল্প হাওয়া ওর গায়ে লাগছে।

ফেব্রুয়ারি যেতে বসেছে প্রায়। শীত তেমন নেই, রাত্তিরের প্রসঙ্গ বাদ দিলে। ফলে এই হাওয়া নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আপাতত কৌরবের নেই।  ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামা-র একটা হুড-জ্যাকেট গায়ে ও মাথায় দিয়ে, প্যান্টের বেল্ট আলগা করে পিঠ এলিয়ে বসেছে কৌরব। ওর কলটাইম শুরু হয় সকলের আগে, শেষ হয় সকলের পর। সারাদিনের ধকলে শরীর তাই রীতিমত ক্লান্ত। তন্দ্রাচ্ছন্ন মন। ধীরে ধীরে ঘুমের ভিতর তলিয়ে যাওয়ার আগে মন্দ্র হলেও শুনতে পাচ্ছে এ আর রহমানের গান। রাস্তায় টায়ার ও হাওয়ার রিদমের সঙ্গে গাড়ির পিছনের স্পিকারে তাল সে তাল মিলিয়ে বাজছে। সংগীত অতএব অন্তরায় প্রবেশ করে, কৌরব তার পার্সোনাল আনকনশাসনেস থেকে বেড়িয়ে কালেক্টিভ আনকনশাসনেসের দিকে যায়, গাড়ির অভিমুখ ব্যাঙ্গালোর ছাড়িয়ে এক অন্য হেরিটেজ শহর, মাইশোর।

যখন বাসস্ট্যান্ডে এসে নেমেছে তখন ভর সন্ধে। সেখান থেকে বাড়ি এক কিমি হাঁটাপথ। অটো এবং টোটো দুইই আছে, কিন্তু এই পথ হেঁটে আসতেই বেশি ভালো লাগে কৌরবের। স্ট্রিট লাইটে পড়া ছায়ার মতোই ওর ক্লান্তি ও চিন্তারা, লুকোচুরি খেলতে খেলতে, ওর সঙ্গে আসছে আর রাস্তায় বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে ওর। প্রত্যেকেই কুশল জিজ্ঞেস করছে, তবে চমকের বিষয় এটাই যে প্রত্যেকের শরীরে, গলার উপরে অংশে মাথাটি নেই, তাই বলে কবন্ধ এমনটাও নয়। আসলে গলা থেকে মাথার বদলে আস্ত একটি তাস, মানে কার্ড। কেউ সেভেন অফ স্পেড, কেউ হার্ট অফ কুইন, কেউ গোলাম, টেক্কা, বাদশা, দশ, নয় সব নিয়ে একটি গোটা টোয়েন্টীনাইন সিরিজ। কৌরব অবাক হয়েই ওদের দেখতে দেখতে বাড়ির দিকে হাঁটছে। যখন পৌঁছালো তখন সন্ধে আর নেই। বিকেল হয়ে গেছে, সদর থেকে সে শুনতে পাচ্ছে পাড়ার মহিলাদের কোলাহল। বুঝতে পারে বাড়ির উঠোনে সকলে জমা হয়েছে দিনের সমস্ত কাজ শেষে। সদর পেড়িয়ে কৌরব বাড়ির অন্তরে ঢোকে। দেখে কেউ নেই, শুধু ওর দিদা বসে আছে একা। কৌরব দিদার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ‘কেমন আছ?’প্রণামকরে।ওর দিদা ওকে দেখে খুশি হয় খুব। ‘বাড়ি আসবি, জানাস নি কেন? একটু মিষ্টি আনিয়ে রাখতাম।’ কৌরব কোনো উত্তর দেয় না, খালি ওর দিদার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কেন অচেনা লাগে ওর! দিদা বলেন, ‘যা হাত-মুখ ধুয়ে নে, স্নান করবি তো? স্নান কর, আমি এই দানটা খেলে আসছি।’ দান? পায়ের তলার বিরাট উঠোন নিমেষে একটা লুডোর বোর্ডে পরিণত হয়। উলটো দিকের দেয়ালে সে দেখে একটি শিবের রিলিফ, ঠিক যেমন ইলোরার একুশ নম্বর গুহায় দেখেছিল। সেখান থেকে মূর্তিটি যেন বেড়িয়ে আসে, নিজের দান দেয়, তারপর ডাইসটা তুলে নিয়ে, সে দেখে, ওর দিদা চাল দিল। সবকিছু কুয়াশা হয়ে যায় ওর। কেউ যেন ওকে পিছনে টেনে নিতে থাকে কোমর থেকে। আর একটা হর্ণের শব্দ ও সেই সঙ্গে একটা জোড়ালো আলো ওর চোখের উপর এসে পড়ে।

Disclaimer

This is a work of fiction. Names, characters, places, and incidents either are the product of the author’s imagination or are used fictitiously. Any resemblance to actual events, locales, or persons, living or dead, is entirely coincidental. The views and opinions expressed in this novel are those of the characters and do not necessarily reflect the official policy or position of any agency, organization, or entity. Reader discretion is advised.

Comments (0)

Rate this Article

0.0 (0 ratings)
How do you feel about this article?
Comments (0)
💬

No comments yet

Be the first to share your thoughts!

Join the Discussion
0/1000 characters
Page-Specific Footer Example